পিতামাতার ভূমিকা যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি অনেক সময় চ্যালেঞ্জিংও হতে পারে। প্রতিটি শিশু কখনও না কখনও কঠিন আচরণের মধ্য দিয়ে যায়—হোক সেটা রাগের ঝড়, কথা না শোনা বা অযথা বিরক্তি। পিতা-মাতা বা অভিভাবক হিসেবে মূল কাজ হলো শাস্তি নয় বরং ভালোবাসা, ধৈর্য আর নিয়মিততার মাধ্যমে শিশুকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া। এই লেখায় আমরা দেখব শিশুদের আচরণগত সমস্যা সমাধানের ৫টি কার্যকর কৌশল।
১. শান্ত ও ধারাবাহিক থাকুন:
শিশুরা অনেক সময় সীমা পরীক্ষা করতে চায়, আর তখন আপনার প্রতিক্রিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিৎকার বা রাগ দেখানোতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। বরং শান্ত থেকে নিয়মগুলিতে ধারাবাহিক থাকুন। যেমন, যদি শোবার সময় রাত ৯টা হয়, তবে প্রতিদিনই সেটা মেনে চলুন। ধারাবাহিকতা বিশ্বাস তৈরি করে এবং শিশুদের বোঝায় তাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২. ইতিবাচক প্রণোদনা দিন:
শুধু ভুল ধরার পরিবর্তে ভালো আচরণগুলো লক্ষ্য করুন এবং প্রশংসা করুন। প্রশংসা, আলিঙ্গন বা ছোট কোনো পুরস্কার শিশুদেরকে আবার সেই ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি শিশু আপনাকে না বলেই খেলনা গুছিয়ে রাখে, তাকে উৎসাহ দিন এভাবে: “তুমি দারুণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছো, আমি তোমার জন্য গর্বিত।”
৩. স্পষ্ট নিয়ম ও প্রত্যাশা নির্ধারণ করুন:
শিশুরা সীমা জানলে অনেক ভালো আচরণ করে। সহজ ভাষায় নিয়মগুলো বুঝিয়ে বলুন এবং নিয়ম ভাঙলে কী পরিণতি হবে তা জানিয়ে দিন। যেমন: “আমরা এই বাড়িতে সুন্দর কথা বলি। যদি তুমি চিৎকার করো, তবে তোমাকে শান্তভাবে কিছু সময় আলাদা থাকতে হবে।” স্পষ্ট সীমারেখা শিশুদের নিরাপদ ও সম্মানিত বোধ করতে সাহায্য করে।
৪. আপনি যেরকম আচরণ চান, সেটিই প্রদর্শন করুন:
শিশুরা শোনার চেয়ে দেখেই বেশি শেখে। আপনি যদি চান শিশু ভদ্র, শ্রদ্ধাশীল ও ধৈর্যশীল হোক, তবে আপনাকেও সেই আচরণ করতে হবে। যেমন, “ধন্যবাদ” বলা বা ভুল করলে “দুঃখিত” বলা শিশুদের শিষ্টাচার ও দায়িত্ববোধ শেখায়।
৫. খোলামেলা যোগাযোগকে উৎসাহিত করুন:
কখনও কখনও খারাপ আচরণ হলো শিশুর মানসিক সংগ্রামের প্রকাশ। এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে তারা সহজে নিজেদের অনুভূতি বলতে পারে। প্রশ্ন করুন, “তুমি কেন কষ্ট পেয়েছো?” বা “আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?” বিচার না করে শোনার অভ্যাস শিশুদেরকে মূল্যবান ও বোঝা হয়েছে এমন অনুভূতি দেয়, ফলে তারা কম খারাপ আচরণ করে।
শেষ কথা:
শিশুদের আচরণগত সমস্যা সমাধান মানে কঠোর শাস্তি নয়—বরং ধৈর্য, ভালোবাসা ও নিয়মের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দেওয়া। শান্ত থাকা, ভালো আচরণকে পুরস্কৃত করা, স্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ, সম্মান প্রদর্শন এবং খোলামেলা যোগাযোগের মাধ্যমে আপনি এমন একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে পারেন যেখানে শিশু সমর্থন পায় এবং ভালো সিদ্ধান্ত নিতে শেখে।
Read this post in English:
https://tips24hub.blogspot.com/2025/08/5_30.html
No comments:
Post a Comment