Tuesday, September 23, 2025

শিশুর অতিরিক্ত ভয়; কারণ ও প্রতিকার:

 শিশুদের মনে ভয় থাকা স্বাভাবিক। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া যা তাদের আত্মরক্ষা শেখায় এবং বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। তবে যখন এই ভয় অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে পড়ে—তখন শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, শিক্ষা এবং মানসিক বিকাশে বিঘ্ন ঘটে।



♥অতিরিক্ত ভয় বলতে কী বোঝায়?

শিশুরা সাধারণত অন্ধকার, উচ্চতা, অপরিচিত মানুষ, পশু, বজ্রপাত ইত্যাদি বিষয়ে ভয় পেতে পারে। কিন্তু যদি একটি ভয় দীর্ঘ সময় ধরে থাকে এবং বারবার তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে—যেমন: ঘন ঘন কান্না, আতঙ্ক, একা ঘুমাতে না চাওয়া, স্কুলে যেতে না চাওয়া ইত্যাদি—তবে সেটিকে "অতিরিক্ত ভয়" হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

♥অতিরিক্ত ভয় হওয়ার সাধারণ কারণ:

১. পরিবারের আচরণ: বাবা-মা বা আশেপাশের মানুষের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা ভয় দেখানো আচরণ শিশুর মনে প্রভাব ফেলে।

২. আঘাতজনক অভিজ্ঞতা: পূর্বে কোনো ভীতিকর ঘটনা যেমন দুর্ঘটনা, হঠাৎ অসুস্থতা, বা নির্যাতনের অভিজ্ঞতা ভয় তৈরি করতে পারে।

৩. অতিরিক্ত সুরক্ষা: শিশুকে সবকিছু থেকে অতিরিক্তভাবে রক্ষা করার চেষ্টা তাকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যা ভয়ের জন্ম দিতে পারে।

৪. স্ক্রিন টাইম ও মিডিয়া: ভয়ঙ্কর এবং বয়সের সাথে সামঞ্জস্যহীন ভিডিও, গল্প, বা গেম শিশুর মনে আতঙ্ক তৈরি করতে পারে।

৫. বংশগত ও জৈবিক দিক:
কোনো শিশু স্বভাবগতভাবে একটু বেশি ভয়প্রবণ হতে পারে। স্নায়ুবিকতা, মস্তিষ্কের বিকাশ কিছু দিক থেকে প্রভাব ফেলতে পারে।

♥শিশুর উপর প্রভাব♥

১.মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

২.ঘুমের সমস্যা

৩.আত্মবিশ্বাসের অভাব

৪.সামাজিক দুর্বলতা

৫.পড়ালেখায় অমনোযোগীতা

♥কীভাবে সাহায্য করবেন?

১. শ্রবণযোগ্য হোন: শিশুকে তার ভয় প্রকাশ করতে দিন, তাকে ছোট মনে না করে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

২. ভয়ের কারণ বোঝার চেষ্টা করুন: সে কী নিয়ে ভয় পাচ্ছে তা বুঝে নিন এবং সেই ভয়ের পেছনের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করুন।

৩. ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করুন: ভয়কে একেবারে দূরে ঠেলে না দিয়ে ধীরে ধীরে শিশুকে সেই পরিস্থিতির সাথে পরিচিত করে তুলুন।

৪. সাহস বাড়ান: শিশুর ছোট ছোট সাফল্যকে উৎসাহ দিন। তাকে বুঝান সে একা নয়।

৫. পজিটিভ রোল মডেল হন: আপনি নিজে ভয় বা সমস্যা সামলাতে কিভাবে আচরণ করেন—সেটাই শিশু শেখে বেশি।

৬.রুটিন তৈরি করুন:
শিশুর দেহ ও মনে নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করতে বিশ্বাসযোগ্য রুটিন বজায় রাখুন — ঘুম, খাওয়া‑দাওয়ার সময়, খেলা ও বিশ্রাম সব কিছু নিয়মিত হতে হবে।


৭.মিডিয়া ও গল্প বেছে নিন:
যে গল্প, ভিডিও বা বই শিশু দেখছে/শুনছে তা ভয়মুক্ত ও নিরাপদ -এটা নিশ্চিৎ করুন। ভয়ঙ্কর বিষয়বস্তু যা তার বয়সের উপযোগী নয়, তা এড়িয়ে চলুন।

৮. প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন: যদি শিশুর ভয় খুব বেশি হয় এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, তবে শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন।

♥শেষকথা♥
ভয় থাকা শিশুর বেড়ে ওঠার একটি অংশ, কিন্তু অতিরিক্ত ভয় তার মানসিক ও সামাজিক বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সচেতনতা, সহানুভূতিশীল আচরণ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা শিশুকে তার ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন, শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।

2 comments:

Natural Ways to Keep Your Heart Healthy

Today is World Heart Day — a perfect reminder to take care of our most vital organ: the heart. Our heart works tirelessly every single momen...