পটভূমি:
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। একে নীরব ঘাতক বলা হয় কারণ এর প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ থাকে না। কিন্তু সময়মতো নিয়ন্ত্রণ না করলে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি বিকল এবং এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
♥উচ্চ রক্তচাপ কী?
রক্তচাপ হলো আমাদের শরীরের ধমনীর ভেতরে রক্ত প্রবাহের চাপ। সাধারণত স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ mmHg।
যদি রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg বা এর বেশি হয়, তখন সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়।
দীর্ঘসময় ধরে এই চাপ বেশি থাকলে তা ধমনীর ক্ষতি করে এবং হৃদপিণ্ডসহ অন্যান্য অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
♥উচ্চ রক্তচাপের কারণ:
১. অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ:
খাবারে বেশি লবণ থাকলে শরীরে পানি জমে যায়, ফলে রক্তের পরিমাণ বেড়ে রক্তচাপও বেড়ে যায়।
২. স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন:
অতিরিক্ত ওজন হৃদপিণ্ডকে বেশি কাজ করতে বাধ্য করে। এতে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
৩. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব:
দীর্ঘসময় বসে থাকা এবং ব্যায়ামের অভাব শরীরে চর্বি জমতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
ফাস্টফুড, ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।
৫. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ:
স্ট্রেস হরমোন রক্তচাপকে সাময়িকভাবে বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি স্থায়ী উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল:
এগুলো রক্তনালী সংকুচিত করে, যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।
৭. বংশগত কারণ:
পরিবারে যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ থাকে তবে জিনগত কারণে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৮. বয়স:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধমনীগুলো শক্ত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়।
♥উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ:
অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের সুস্পষ্ট কোনো লক্ষণ থাকে না। তবে মাঝে মাঝে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে—
১.ঘন ঘন মাথাব্যথা
২.মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব
৩.চোখে ঝাপসা দেখা
৪.বুকে চাপ বা ব্যথা
৫.শ্বাসকষ্ট
৬.ক্লান্তি বা অবসাদ
👉 এসব উপসর্গ থাকলে অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
♥উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের উপায়:
১. সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন:
♥লবণ ও তেল কম খান
♥বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান
♥ফাস্টফুড, কোমল পানীয় ও ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলুন
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
♥প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন
♥সাইক্লিং, সাঁতার বা যোগব্যায়াম করতে পারেন
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
♥অতিরিক্ত ওজন কমালে রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।
৪. মানসিক চাপ কমান:
ধ্যান, যোগব্যায়াম, গান শোনা বা প্রিয় কাজের মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন:
♥ধুমপান ও অ্যালকোহল উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
৬. নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন:
♥মাসে অন্তত একবার রক্তচাপ মাপুন। দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের জন্য বাড়িতে BP Monitor রাখা ভালো।
#সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ):
১. উচ্চ রক্তচাপ কি পুরোপুরি সারানো সম্ভব?
👉 সাধারণত এটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। তবে জীবনধারা পরিবর্তন ও ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
২. কোন বয়স থেকে রক্তচাপ মাপা উচিত?
👉 ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা ভালো। তবে পরিবারে যদি হাইপারটেনশনের ইতিহাস থাকে, তাহলে আরও আগে থেকে মাপা উচিত।
৩. উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোন খাবার সবচেয়ে ভালো?
👉 কলা, পেঁপে, আপেল, শাকসবজি, ডাল, ওটস, বাদাম, অলিভ অয়েল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৪. কফি বা চা খাওয়া কি রক্তচাপ বাড়ায়?
👉 অতিরিক্ত কফি বা চা সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তবে সীমিত পরিমাণে ক্ষতিকর নয়।
৫. উচ্চ রক্তচাপ কি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়?
👉 হ্যাঁ, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
♥শেষকধা♥
উচ্চ রক্তচাপ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও সঠিক সময়ে সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
👉 মনে রাখবেন, প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা। তাই এখন থেকেই সুস্থ অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।
This post is helpful for all.
ReplyDeleteThank you so much.
Delete